'আফরাহ সিরিজ' থেকে ১০ টি কবিতা।। বাপ্পা আজিজুল।। মানসলোক।।
বাপ্পা আজিজুল
'আফরাহ সিরিজ' থেকে ১০ টি কবিতা
১.
আমাদের ভালোবাসার
ডাকনাম সুকুন।
আফরাহ, তুমি
কি জানো
সুকুন কি?
দুটি শরীরের
ঘ্রাণ এক
হওয়ার নাম
সুকুন। দুটি
মনের রঙ
অভিন্ন হওয়ার
নাম সুকুন।
যেহেতু আমাদের
লেবাস এক।
সূত্রমতে, আমাদের
ঘ্রাণও অভিন্ন।
তাই এ
সুকুনের টানেই
আমি বারবার
ফিরে আসি।
আসতে হয়।
আমাদের মনোল্যাবে
টাইট্রেশন হয়।
গাঢ় গোলাপি
রঙে সংবেদনশীল
হয়ে উঠে
ভালোবাসার ব্যঞ্জন। স্রষ্টার
ঢেলে দেয়া
সুকুন।
২.
আমাদের খুনসুটি
যখন মনোমালিন্যে
রূপ নেবে,
আমরা আসসালামু
আলাইকা বলে
পরস্পর সালাম
বিনিময় করব।
সালামেই শান্তি।
হাইপো দ্রবণে
ডুবিয়ে রিনিউ
করবো ভালোবাসা।
অথবা সলিউশন
হবে জায়েনামাযে।
নির্বাক নয়নে।
অঝোর শ্রাবণে।
দুজোড়া হাত
জড়িয়ে মুনাজাতে।
হৃদয় নিমগ্ন
পরস্পরের মাগফিরাতে।
৩.
তোমাকে প্রথম দেখতে গিয়ে আড়চোখে তাকানোর যে অভিযোগ করো তার একটি সাইকোএনালিটিকাল দীর্ঘ ইতিহাস আছে বুঝলে আফরাহ। আলমে আরওয়াতে প্রভু যখন সমস্ত রুহের শপথ নিয়েছিলেন, তখন সে মহাসমুদ্রে আড়চোখে চুপিচুপি দেখেছিলাম তোমাকে। পেহেলে দেখাসে পেয়ার। লক্ষ-কোটি বছর ইনকিউবেটরে কাটানোর পর প্রভু বললেন, "নেমে যাও"। আমি বললাম, "প্রভু, আমি ঐ মেয়েটি ছাড়া একা নামবো না"। প্রভু ধমক দিলেন, "গর্দভ! ওয়েল ইউর ওন মেশিন।"
৪.
আহমদ ছফার
মত বলতে
ইচ্ছে করে-
তোমাকে আমি
কোথায় রাখব
আফরাহ? হৃদয়ে? হৃদয়ের
কোথায় রাখব?
ডান অলিন্দে?
এত ছোট
তো তুমি
নও। তাছাড়া
কার্বন ডাই
অক্সাইড সমৃদ্ধ
রক্তে দম
বন্ধ হবে
যে তোমার।
ডান নিলয়ে
রাখব? রাখতে
পারি কিন্তু
ডান নিলয়ে
রাখলে সহজেই
রক্তের স্রোতে
খেই হারিয়ে
তুমি লাপাত্তা
হবে ফুসফুসে।
আবার বাম
অলিন্দে যদি
রাখি তাও
গোস্বা! বেশীক্ষণ
যে রাখতে
পারব না
ধরে। তুমি
পাড়ি দেবে
বাম নিলয়ের
পানে। সেই
ভালো। বাম
নিলয় ঢের
নিরাপদ, পুরু,
কর্মঠ। আমি
তোমাকে সেখানেই
রাখতাম যদি
না বাগড়া
দিত বড়
ধমনীটা। সে
তোমাকে পাচার
করে দেবে
দেহপটে। হায়!
সে বিরহ
সইব কী
করে!
তাই জান,
হৃদয়ে ঠাঁই
নেই তোমার।
এটুক শুনে
কী ভর্ৎসনা
করবে আমাকে?
ফিরিয়ে নেবে
ভালোবাসার দিব্যি? বলছি
তবে শোন-
আমার মস্তিষ্কে
মজুদ নিযুত
কোটি নিউরনের
বিলিয়ন বিলিয়ন
সিন্যাপসের স্মৃতিতে অমর
করে রাখব
তোমায়। ক্ষয়
নাই, লয়
নাই যতদিন
নি:শ্বাসের ফেরী করছি
এ ধরায়।
৫.
আমার ফুসফুসের
৩০০ মিলিয়ন
শ্বাসকুঠুরীর ১১৮ বর্গমিটার
জুড়ে তোমার
মালিকানা বুঝিয়ে
দিলাম আফরাহ। হেবা
করলাম তোমাকে।
তুমি দখল
নাও, ভোগ
কর, চাষ
কর, বর্গা
দাও সবই
তোমার মর্জি।
চতুর না
হলে ফতুর
হতে পারো।
লোভাতুর চেয়ে
রয় শকুনের
দল, বেহাত
হলে পস্তাবে
জীবনভর।
৬.
মাইকেল ফ্যারাডের আধানের সূত্রানুযায়ী আকর্ষণ বল দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। আমরা প্রমাণ করে দেব দূরত্ব যতই হোক আকর্ষণ থাকে প্রবল। সময়ের অভিশাপ একদিন আশীর্বাদ হবে আফরাহ। আমি সলোমন হয়ে পলকে পাড়ি দেব হাজার মাইলপথ। আমার রাণীর অবগাহনে, বিলাসে কাটাবো তিনরাত।
৭.
তোমাকে নিয়ে
কেমন এক
সিরিজ কবিতা
লিখছি বলো
তো আফরাহ। রূপবন্দনা
নেই। ঝরণার
মত ঝুলে
পড়া কেশের
আখ্যান নেই।
অরণ্যের মতো গভীর
ও শীতল
চক্ষুর বয়ান
নেই। উপত্যকার
মতো গালের
টোল নিয়ে
আদিখ্যেতা নেই।
নেই সমুদ্র
সফেনের মতো
সৌষ্ঠবের সরস
উন্মাদনা। অথচ
আমার সুযোগ
ছিল ইমরুল
কায়েসকে ছাড়িয়ে
যাওয়ার। হাফিজ,
ইকবাল, মীর
তকি মীর
কিংবা গালিবকে
টেক্কা দেয়ার।
সেই আমি
কিনা তোমাকে
দাঁড় করিয়েছি
উম্মু সুলাইম
আর জয়নাবের
কাতারে। হায়রে
কবিতা! এও
কী ভালোবাসা!
৮.
মাঝরাতে ফোন
দিতে ইচ্ছে
করে খুব।
কেন? সারাদিন
তো কত
কথা হয়!
তবু। দিনের
অবসাদ আমাকে
তাড়া করে
তখনও। তোমার
গভীর ঘুম
ভাঙিয়ে কষ্ট
দিতে মন
চায় না।
আমি পুড়ি।
তোমার ঘুম
জড়ানো স্বর
অসম্ভব মিস
করি। সেসময়
তুমি ঈশ্বরী
হয়ে ওঠ।
যাকে পাওয়ার
জন্য যৌবনের
অনন্ত সাধনা।
যাতনা। মাতৃস্তন্য
পান করতে
করতে ঘুমিয়ে
যাওয়া শিশুর
মুখ ভেসে
ওঠে। এর
চেয়ে স্বর্গীয়
আর কী
হতে পারে?
জগতের সবচেয়ে
নির্মল-পবিত্র সেই দৃশ্য
দেখতে দেখতে
আমি সিদরাতুল
মুনতাহা পেরিয়ে
আলমে মিছালে
প্রবেশ করি।
৯.
আফরাহ, তোমার
এইট্টি বিটস
পার মিনিট
হৃদস্পন্দন আমি রোজ
গুনি। ঐ
বুকে মাথা
গুঁজে কত
শত স্বপ্ন
বুনি। চাষীর
ছেলে চাষী।
চৌদ্দপুরুষের আবাদি কারবার।
হাল ঠেলি।
মই দেই।
হৃদয়ের গভীর
খুঁড়ে জলসেচ
করি। ফল
লাভের আশায়।
ফল থেকে
বীজ। বীজ
থেকে উত্তরসূরি।
আমার উর্বরা, সুফলা ক্ষেতে
এটুকু চাওয়া
কী বিলাসিতা?
১০.
হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে
আফরাহ মনি! এসো আমরা
জাস্ট ফ্রেন্ড,
কুটুকুটু বাবু
থেকে প্রাপ্তবয়স্ক
প্রেমিক হয়ে
উঠি। জগতের
সকল পুরুষই
তা চায়।
অথচ আমরা
কেমন ডাবল
স্ট্যান্ডার্ড দেখো। শরীরের
লালসা গহিনে
পুষে মানবিক
বন্ধু হওয়ার
ভাণ করি।
মনের পূজারী
কজন? শরীরের
ভিখিরি সবাই।
আই লাভ
ইউ আফরাহ...আমাদের
বন্ধুত্ব একটি
সফল পরিণতি
পাক। নতুন
ভাবে সংজ্ঞায়িত
হোক। এসো
তবে সুযোগ
বুঝে আমরা~
কোমল বন্ধু-চতুর
নাগর-দায়িত্বশীল পতি ~এই গতিশীল চক্রে ঢুকে
পড়ি।
No comments