সাক্ষাৎকার উইদ মেডিভয়েস।। বাপ্পা আজিজুল।। মানসলোক।।
লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?
-লেখালেখিটা সহজাত।
শুরুটা সেভেন-এইটে। অনেকটা পাঠ্যবইয়ের কবি-কবিতার প্রতি অনুরাগ, তাদের অমর সৃষ্টির
প্রতি মুগ্ধতা ও বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা। কিংবা কীর্তিমানের মৃত্যু নেই দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়েই লেখালেখির হাতে খড়ি। পরিচিত মহলের
উৎসাহ বিষয়টিকে আরও ত্বরান্বিত করে। এসএসসির পরপর যখন স্থানীয় দৈনিকে লেখা প্রকাশিত
হতে থাকল তখন আর আমাকে পায় কে? আমি লিখিয়ে হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এখনও যে মজে আছি সে
নেশায়। হা হা হা... এখন অবশ্য কিছুটা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও লিখছি। হয়ত ক্রমেই সেটি বাড়বে।
এ পর্যন্ত কী কী বই প্রকাশিত হল?
-ধন্যবাদ। নিরেট সাহিত্য
বিচারে এ পর্যন্ত পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
অন্তরীণ (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৪)
যেতে হবে বহুদূর (নিবন্ধ সংকলন, ২০১৬)
রমাদান কারীম- দ্য প্যানাসিয়া অফ হার্ট (২০১৬)
ইবরাহিম আ. -ফাদার অফ প্রোফেটস (২০১৬)
নাগরিক বিষণ্ণতা (কবিতাগ্রন্থ, ২০১৭)
সর্বশেষ, নিঃসঙ্গপথিক (বায়ো-নভেলা, ২০১৯)
এছাড়া ছাত্রজীবনে কিছু একাডেমিক গাইড লিখেছিলাম। এখন হাতে বেশ কয়েকটি পাণ্ডুলিপিও প্রস্তুত অবশ্য।
মেডিভয়েস: ‘নিঃসঙ্গ পথিক’ নিয়ে বিস্তারিত জানতে
চাই, কোথায় পাওয়া যাচ্ছে বইটি।
একজন ঠোঁটকাটা মানুষ জুন্দুব ইবন জুনাদা। যার সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করা
হয়েছিল তিনি নির্জন প্রান্তরে একাকি মারা যাবেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কিংবা
ভাগ্য সুপ্রসন্ন যাই হোক, জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত এবং চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে
মৃত্যুর আগে তিনি নির্জন উপত্যকায় স্থানু হন। এভাবেই এগিয়েছে 'নিঃসঙ্গ পথিক'
বায়ো-নভেলা।
রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রখ্যাত সাহাবি আবু যার গিফারি রা.কে নিয়ে লেখা
উপন্যাসিকায় ফুটে উঠেছে কুরআন-হাদিসের নির্যাস, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস,
ফিলোসোফি, হিউম্যান সাইকোলজি ও সাহিত্যের দ্যোতনা। তাই নিছক বায়োগ্রাফি কিংবা
খেয়ালী উপন্যাস নয়। এটি একটি 'বায়ো-নভেলা'।
জুন্দুব থেকে আবু যার। রূপান্তরই বটে। তবে কাফকার মেটামরফোসিসের মতো
রাতারাতি নয়। সে এক বর্ণাঢ্য জীবন।
বিচিত্র উপাখ্যান।
বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে 'নিঃসঙ্গ পথিক'। প্রকাশকঃ
বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি। ঢাকা স্টল নং ২৮ (বাংলা
একাডেমি আঙিনা), চট্টগ্রাম স্টলঃ ৯৪ । গায়ের মূল্য ১১০ টাকা। কুরিয়ারে নিত্র অর্ডার করতে যোগাযোগ করুন ০১৭৮১১৭২০২৬। অর্ডারে
দাম পড়বে ২৫% ছাড়ে ৮০ টাকা মাত্র প্লাস কুরিয়ার চার্জ ২৫/-প্রযোজ্য।
আপনার প্রথম বই সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমার প্রথম বই 'অন্তরীণ' কবিতা নিয়ে। ২০১৪ সালে মার্চে প্রকাশ করি। তখন ফাইনাল প্রফ চলছিল। অথচ আমি বইমেলায় বই নিয়ে আসার জন্য মরিয়া। পরে যদিও টেকনিক্যাল কারণে বই মার্চে প্রকাশ হয়। সে এক বিশেষ সময় ধারণ করে আছে। সোনালী অতীত। রক্তে আগুনলাগা যৌবন। বইটিতে আছে প্রেম, দ্রোহ ও বিজ্ঞানের তুলির আঁচড়। বইটির পাঠক আবেদন অভাবনীয়। জনপ্রিয় কিছু কবিতা হল- জিন্দালাশ, তোমার ডাকে, হিস্টেরিয়া
প্রভৃতি।
লেখক হিসেবে কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন?
একজন লেখকের প্রতিদ্বন্দ্বী লেখক নিজেই। লেখকের মোটিভেশন বা inner drive যদি strong থাকে তবে কোন প্রতিকূলতাই আসলে তাকে দমিয়ে রাখতে
পারেনা। তবে কিছু বিষয় তো বাঁধাগ্রস্ত করেই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের লিখিয়ে গোষ্ঠী স্পষ্টত দুটি আদর্শিক শিবিরে বিভক্ত। সুতরাং আপনি যতই ভালো লিখুন, আপনার আদর্শ মনোপুঃত না হলে আপনি অচ্ছুৎ। তথাকথিত জাতে উঠতে পারবেন না। এছাড়া প্রকাশকেরা নতুন
লেখক, বিশেষ করে কবিতার বইয়ে লগ্নি করতে চান না। আরেকটি সমস্যা এখন প্রকট। অনলাইন ব্রান্ডিং। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া সাপোর্ট বা ফলোয়ার বেশি, বইয়ের কাটতি বেশি। মান যেমনই হোক।
পেশাগত দায়িত্ব পালন ও লেখালেখি, কিভাবে সমন্বয় করেন?
-কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। আসলে চাপ একটা নেতিবাচক শব্দ। আমার কাছের জনেরা জানেন
আমি রিল্যাক্স থাকি। চাপ নিই না। সময় ও সদিচ্ছা বড় ব্যাপার। আমি টার্গেট ফিক্স করি।
তারপর নিয়মিত সময় বের করার চেষ্টা করি। মজার ব্যাপার হল লেখালেখির জন্য আপনাকে আলাদা
করে সব কিছু গুটিয়ে টেবিলে বসতে হবে তাও নয়। আমি চলতে ফিরতে, কাজের ফাঁকেই মাথায় কিছু
ক্লিক করলে নোট রাখি। পরে সেটা ঘষা-মাজা করে চুড়ান্ত করি। এছাড়া মাঝে মাঝে ঝোঁকপ্রবণতা তো থাকেই।
যারা নতুন
লিখিয়ে বিশেষ করে মেডিকেল শিক্ষার্থী তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
-যে লিখতে চায় বয়স, পেশা, অবস্থান তার জন্য অন্তরায় নয়। প্রত্যেককে তার নিজের
মত করে সিস্টেম ডেভেলপ করতে হয়। তবে লেখার জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত পড়তে হবে। পড়াটাও
হতে হবে পরিকল্পনামাফিক, নিয়মমাফিক ও সার্বজনীন। চিন্তার জগতকে উন্মোচিত করতে হবে।
বিষয়টি এরকম "Think first, Think fast"। পাঠকের মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে। লেখাকে
পাঠকের জন্য সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করতে হবে। আমরা যান্ত্রিক যুগে বাস করছি তাই লেখাকে
সাবলীল, সংক্ষিপ্ত ও প্রামাণ্য করতে হবে। মেডিকেল শিক্ষার্থী যারা লিখতে চায় তাদেরকে
স্বাগত জানাই। আপনারা জাতির মাখন, ঘি, পনিরের মত। একাডেমিক পড়ালেখাকে বাইপাস করে নয়,
সাযুজ্য রেখে লেখালেখি করুন। প্রকৃতিতে লেখার অনেক উপাদান আছে। মেডিকেল শিক্ষার্থী
বলেই যে শুধু স্বাস্থ্য বিষয়কক বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখতে হবে তা নয়। যা মন চায়
লিখুন। নিজের লেখা নিজেই শতবার রিভিউ করুন, দেখবেন লেখা ম্যাচিউর হবে।
আপনার জন্ম, শৈশব, পড়ালেখা?
-জন্ম হোক যথা তথা কর্ম
হোক ভালো। বেড়ে উঠা বগুড়ায়। বিদ্যা কুড়িয়ে রুটির যোগ চাঁটগা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
থেকে স্নাতক অর্জন করেছি। শৈশবে বগুড়া জিলা স্কুল আমাকে ঋদ্ধ করেছে। বগুড়া আযিযুল হক
কলেজে হয়েছে কৈশোরপাঠ।
পছন্দ করেন কী কী?
-অনেককিছুই তো পছন্দ
করি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। খেটে খাওয়া মানুষদের খুব পছন্দ করি। বিশেষ করে তাদের গ্রন্থিল
পেশী। আমার কাছে উৎপাদন ও বিপ্লবের প্রতীক মনে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছি বলেই
হয়ত সারল্য পছন্দ করি। ডাল-ভাত, পান্তা কিম্বা লতাপাতা তাই আমাকে বেশি টানে। একজন বিশ্বাসী
হিসেবে মধ্যমপন্থা পছন্দ করি। আরও কত কি!
আর অপছন্দ?
-অপছন্দের তালিকা তেমন
দীর্ঘ নয়। যা কিছু অসুন্দর ও অন্যায় তাই আমার অপছন্দ। বিনয়ের সাথে
পরিত্যাজ্য।
আপনার জীবনে স্বপ্ন?
-কবিরা স্বপ্ন দেখে,
স্বপ্ন দেখায়। স্বপ্ন সৎভাবে বেঁচে থাকার। স্বপ্ন কিছু কালজয়ী সৃষ্টি রেখে যাওয়ার।
স্বপ্ন পাশবিকতার বিপরীতে মানবিকতার উত্থান ঘটানো।
স্যার, মেডিভয়েস সম্পর্কে কিছু
বলুন!
মেডিভয়েস নামটাই যথার্থ। নামের প্রতি সুবিচার করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ,
দলাদলির উর্ধ্বে মানবতার জন্য কাজ করতে হবে। সার্বজনীন হতে হবে। প্রকাশনা ও
সম্পাদনার সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা। শুদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে
নিজস্ব ধারা ও অবস্থান তৈরি করতে হবে। চিকিৎসক সমাজের ন্যায়সঙ্গত বিষয়গুলোতে সবসময়
পাশে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
No comments