রব্বানী হয়ে যাও || বাপ্পা আজিজুল || মানসলোক ||
বাপ্পা আজিজুল
ভূমিকা:
'রব্বানী হয়ে যাও' كُوْنُوْا رَبّٰنِیّٖنَ কুর'আনের নির্দেশ। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী আমরের সিগাহ। আমরা যারা মুসলিম তাদের জন্য রব্বানী হওয়ার চেষ্টা করা তাই ফরজের শামিল। রব্বানী শব্দটি কুর'আনে ৩ বার বিবৃত হয়েছে, যথাক্রমে- সূরা আলে ইমরান ৭৯, সুরা মায়িদা ৪৪ ও ৬৩ নং আয়াতে। রব্বানী শব্দটি রব্বা ধাতু থেকে আগত এককথায় যার অর্থ তাফসিরবিদরা করেছেন 'আল্লাহওয়ালা' বা আল্লাহর সাধক, রবওয়ালা বা মহান রবের লোক। রব শব্দের ৫ ধরণের অর্থ হয়: ১. পরিচর্যাকারী (nourisher), লালন-পালনকারী (sustainer), প্রয়োজনীয় বস্তু যোগানদাতা, তরবিয়ত ও ক্রমবিকাশ দাতা। ২. প্রভু (master), মালিক, মুনিব ও সত্ত্বাধিকারী (owner) অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ৩. জিম্মাদার, তত্ত্বাবধায়ক, দেখাশোনা ও অবস্থার সংশোধন-পরিবর্তনের দায়িত্বশীল। ৪. যিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করনে এবং যাকে কেন্দ্র করে লোকেরা সমবেত হয়। ৫. নেতা-সর্দার, যার আনুগত্য করা হয়, ক্ষমতাশালী কর্তাব্যক্তি, যার নির্দেশ চলে, যার কর্তৃত্ব মেনে নেয়া হয়, হস্তক্ষেপ ও বলপ্রয়োগের অধিকার আছে যার।
রব শব্দটি নামবাচক বিশেষ্য। এর বহুবচন আরবাব। রব শব্দটি রব্বা ধাতু থেকে এসেছে। এই ধাতুর ক্রিয়াপদ হল তারবিয়াহ বা শিক্ষা দেয়া। আরবিতে গৃহিণীদের 'রব্বাতুল বাইত' বলা হয় কারণ তারা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করে। ঘরের মালিককে বলা হয় রব্বুদ্দার। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কিভাবে লালন-পালন করেন তার একটি নমুনা পাওয়া যাবে রব্বা ধাতুর রূপ থেকে। রব্বা ধাতুর তিনটি রূপ। ১. রাবা-ইয়ারবু, মানে growing বা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া। ২. রাব্বিয়া-ইয়ারবায়া, মানে being big বা সাইজে বড় হওয়া। ৩. রাব্বা-ইয়ারুব্বু, মানে improving বা উন্নতি করা, controlling বা নিয়ন্ত্রণ করা, guiding বা পথ নির্দেশ করা, maintaining বা চর্চা বা লালন করা। সুতরাং সূরা বাকারার ৫নং আয়াতে 'হুদাম্মির রব্বিহিম' রবের পক্ষ থেকে হেদায়েত শব্দযুগল খুবই যুক্তিযুক্ত ও একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত এবং যারা উক্ত হেদায়েত তাদেরকে সফল বলা হয়েছে। কুর'আনে রব্বা ধাতু ৪টি রূপে ৯৮০ বার এসেছে। এর মধ্যে রব হিসেবে ৯৭৫ বার। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে রবের স্থান সর্বাগ্রে। তাই সূরা ফাতিহাতে আল্লাহর পরিচয় জানাতে আল্লাহ নামের পরেই রব নাম এসেছে। কুর'আনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রব শব্দটির সাথে আলম ও নাস যুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার রবুবিয়াত তাওহীদের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা 'রব্বুল আলামিন' অর্থাৎ মহাবিশ্বের রব। এই মহাবিশ্বটি কেমন? আলম শব্দের অর্থ জগতসমূহ। আলম নিজেই বহুবচন। আবার আলামিন হল আলমের বহুবচন। মানে অগণিত জগত (Kingdom/world)। মানুষের দৃষ্টি ও শ্রুতির নির্দিষ্ট সীমা আছে। এর বাইরের জগত বিজ্ঞানের কল্যাণে কিছুটা আবিষ্কৃত হলেও প্রায় পুরোটাই এখনও অনাবিষ্কৃত বলা যায়। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ফোটন/পজিট্রন/প্রোটন কণার জগত, এককোষী জীবকণা বা অকোষীয় ভাইরাস থেকে শুরু করে বৃহৎ অণুর জগৎ, বিশাল অণু থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ, আমাদের বিশাল গ্রহ পৃথিবী এবং পৃথিবীর পর থেকে জ্ঞাত মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্যালাক্সি ও আরও অজানা জগতের রব মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি সুচারুরূপে এসব দেখভাল, লালন-পালন, রিজিকের ব্যবস্থা, আবির্ভাব-তিরোধান নিয়ন্ত্রণ করছেন। এটিই আল্লাহ তায়ালার রবুবিয়াত।
রব্বানী কে?
'রব্বানী' শব্দের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মত এসেছে। শব্দটি ইবরানী ভাষা থেকে আরবিতে এসেছে কেউ কেউ মনে করেন। রব্বানী শব্দটি তাওরাত ও ইঞ্জিলে বারবার উল্লিখিত হয়েছে। শব্দের আকৃতিতে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও অর্থের দিক থেকে কোন ফারাক নেই (তাদাব্বুরে কুর'আন)। ইবনে কাসির বলেছেন, রব্ব শব্দের পরে আলিফ ও নুন এসেছে তাকিদের জন্য এবং এটি এর ফলে মুবালাগা (আধিক্য বুঝাতে) রূপ ধারণ করেছে। ইবনে আব্বাস থেকে এক বর্ণনায় এর অর্থ এসেছে, حُكَماَء عُلَمَاء حُلَمَاء অর্থাৎ প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী ও সহিষ্ণু হওয়া। হাসান বসরী বলেন, ফকীহ হওয়া। অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস, সাঈদ ইবন জুবাইর, কাতাদাহ, আতা সহ অনেকের মতে এর অর্থ ইবাদত ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়া (ইবন কাসির)। এগুলোতে কোন বিরোধ নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ এ শব্দটি رُبَّانُ السَّفِيْنَةِ (জাহাজের নাবিক) শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ কর্ণধার, পরিচালক, বিপদে নেতৃত্বপ্রদানকারী (মাজমু ফাতাওয়া)।
ইমাম কুরতুবির মতে, রব্বানী সেই ব্যক্তি যিনি মানুষকে পথনির্দেশ (রাব্বা) করেন অল্প জ্ঞান থেকে বৃহৎ জ্ঞানের পরিসরের দিকে। ব্যাপারটি এমন যে, তিনি বিষয়গুলোকে সহজ করতে তার রবের অনুসরণ করছেন বা প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন। একজন রব্বানী রবের দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং তিনি সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনকারী। যদি তিনি জ্ঞানের অনুপাতে কাজ না করেন তাহলে তিনি জ্ঞানী (আলিম) বা রব্বানী নন (তাফসিরে কুরতুবি)।
আল-মুবাররাদ বলেছেন, রাব্বানিয়্যুন অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী, রব্বান হল এর একবচন। এটির ধাতুগত অর্থ 'সঠিক রাখা'। সুতরাং রব্বানীরা মানুষের বিষয়-আশয় ডিল করে এবং তাদেরকে সঠিক পথে রাখে। আবু রাজিন রব্বানী অর্থ করেছেন, প্রজ্ঞাসম্পন্ন আলিম। শুবাহ, ইবনে মাসউদের সূত্রে জানিয়েছেন, আলিমদের মধ্যে যিনি প্রজ্ঞাবান। আদ-দাহহাক মনে করেন, রব্বানীদের কুর'আন মুখস্থকরণ কখনও ছেড়ে দেয়া উচিত নয় এবং তারা ফিকাহ বিশারদ আলিম। ইবনে জায়েদ রা. রব্বানী বলতে বুঝিয়েছেন, শাসক ও রাব্বী বা জ্ঞানী পাদ্রীদের। ব্যাখ্যায় বলেছেন, যারা জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন ও জনগণের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। মুজাহিদ বলেন- রব্বানীরা রাব্বীদের চেয়ে উচ্চমার্গীয়। আন-নাহহাস একমত হয়েছেন এব্যাপারে, তিনি আরও যুক্ত করেছেন, রব্বানীদের রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদর্শিতা রয়েছে। আরবরা 'রব্বা' ক্রিয়াপদটি ঐ ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করে যে মানুষের সুখেদুঃখে হাজির থাকে, বিবাদ মিটিয়ে দেয় ও সংশোধন করে দেয়। এধরণের ব্যক্তিকে রব্বানী বলা হয়। আবু উবায়দা বলেছেন, আমি জনৈক বিজ্ঞ ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি- রব্বানী হল সেই যে হালাল-হারাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত এবং উম্মাহ'র খবরাখবর (অতীত-বর্তমান) জানে। যেদিন ইবনে আব্বাস ইন্তেকাল করলেন, মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ মন্তব্য করেন, আজ উম্মাহ'র একজন রব্বানী মারা গেছেন (তাফসিরে কুরতুবি)।
ইবনে তাবারীর মতে, রব্বানী অর্থ হল যিনি মানুষের প্রতিপালন, কার্যনির্বাহ, প্রভূত্ব ও নেতৃত্ব দান করেন। ফিকাহ ও হিকমত শাস্ত্রের যিনি সত্যপন্থী আলিম, মানুষের কার্যাবলীতে কল্যাণের শিক্ষা দান করেন এবং তাদেরকে মঙ্গলের দিকে আহ্বান জানিয়ে প্রতিপালন করেন। এমনিভাবে আল্লাহভীরু হাকিম ও ওলি, যিনি মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করেন এবং দীন-দুনিয়ার কল্যাণার্থে মানুষের যাবতীয় কাজ-কর্মে নেতৃত্ব দান করেন, তারা সকলেই মহান আল্লাহর বাণী অনুযায়ী রব্বানী হওয়ার উপযুক্ত। যারা দীন-দুনিয়ার কাজকর্মে, ফিকাহ শাস্ত্র ও অন্যান্য জ্ঞানের শাখায় মানুষের জন্য খুঁটি স্বরূপ তারাও রব্বানী। মুজাহিদ র. ব্যাখ্যা করেছেন, পাদ্রিরা হল সাধারণ জ্ঞানী। রব্বানীরা হলেন সাধারণ জ্ঞান, ফিকহ, দর্শনশাস্ত্রে পারদর্শী। রাজনৈতিক এবং জাতীয় জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা দক্ষ নেতা হিসেবে মানুষের ইহকাল ও পরকালের সমস্ত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন (তাফসিরে তাবারী)।
রব্বানী সম্পর্কে আল-বায়যাবী বলেছেন, যার নির্ভুল জ্ঞান রয়েছে। আল-আলুসি বলেন, যিনি জ্ঞানী, জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী ও সত্যপন্থী, মানুষের কার্যাবলী পরিচালনায় দক্ষ। ইমাম গাজালির মতে, রব্বানী আল্লাহর অধিক নিকটতর। আব্দুল আজিজ কুহাইল জানাচ্ছেন, রব্বানী একজন বুদ্ধিবৃত্তিক মননশীল মুসলিম, যার একটি জাগ্রত হৃদয় ও উৎপাদনশীল হাত-পা রয়েছে, যার পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে আল্লাহর খলিফা হওয়ার যোগ্য এবং যিনি সংস্কারমুখী ও পরিবর্তনশীল বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পারঙ্গম।
পূর্বসূরিদের মতামত পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়, একজন রব্বানী গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী হবেন। জ্ঞানের তিনটি উৎসের (আকল, নাকল, কাশফ) সমন্বয় সাধন করবেন। এক্ষেত্রে তিনি মধ্যমপন্থী ও সমন্বয়বাদী হবেন। তাঁর এই জ্ঞানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। তিনি জ্ঞান ও চিন্তার পরিশুদ্ধকরণে অগ্রবর্তী হবেন। সৎকর্মশীল ও সত্যপন্থী হবেন। তিনি জ্ঞান অর্জন করেই ক্ষান্ত হবেন না। জ্ঞানের বিকাশ ও প্রসারে সমকালীন সকল উপায়-উপকরণ কাজে লাগিয়ে প্রচেষ্টা চালাবেন। তিনি মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ে প্রতিপালন ও পথনির্দেশের দায়িত্ব পালন করবেন। সুখ-দুখের ভাগীদার হবেন। সমাজের বৃহত্তর কল্যাণার্থে কাজ করবেন। সেক্ষেত্রে সমাজের বিচ্যুতি ও বিকৃতি নির্ণয় এবং চিকিৎসার গুরুভার বহন করবেন। তিনি রাজনীতি সচেতন হবেন, রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবেন অথবা সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন। মূলত, তিনটি ক্ষেত্র বা ডোমেইনে তাঁর কাজের প্রধান ফোকাস ও এক্সপার্টাইজ থাকবে। ১. ধর্মতাত্ত্বিক ও জ্ঞানমূলক (Theo-epistemiological) ২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক (Socio-cultural) ৩. বিচারিক ও রাজনৈতিক (Politico-legal)। একজন রব্বানী আল্লাহর হক আদায় ও বান্দার হক পরিপালন করে হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়গুলো তাঁর নজরে থাকবে, তবে তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অগ্রসর হবেন।
রব্বানীদের বৈশিষ্ট্য:
কুর'আনের আলোকে রব্বানীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১. জ্ঞান অর্জন করে (তাদরুসুন)। (ইমরান ৭৯)
২. জ্ঞান শিক্ষা দেয় (তু'আল্লিমুন)। (পূর্বোক্ত)
৩. কিতাবের ভিত্তিতে ফয়সালা করা (মায়িদা ৪৪)
৪. শরিয়াহ'র সংরক্ষণ করা (পূর্বোক্ত)
৫. দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহর সাক্ষী হওয়া (পূর্বোক্ত)
৬. সৎকাজের আদেশ, পাপকাজের নিষেধ করা (মায়িদা ৬৩)
৭. আল্লাহর পথে লড়াই করা (ইমরান ১৪৬)
৮. বিপদে মনমরা ও হতাশ না হওয়া (পূর্বোক্ত)
৯. দুর্বলতা প্রদর্শন না করা (পূর্বোক্ত)
১০. বাতিলের কাছে মাথা নত না করা (পূর্বোক্ত)
সালমান আল-আওদাহ রব্বানীদের ১০ টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন,
১. জ্ঞানী
২. ইত্তিবা (অনুসরণকারী)
৩. ইখলাস (চিন্তার পরিশুদ্ধতা)
৪. নৈতিকতা
৫. বিজ্ঞানের বিভা সম্পন্ন (কিন্তু বিজ্ঞানবাদী নন)
৬. প্রজ্ঞাবান
৭. প্রজ্ঞার উচ্চস্তর সম্পর্কে অবগত
৮. আমলে সালেহকারী
৯. অধ্যয়নরত
১০. সভ্য নাগরিক (civilized)
গবেষক সারবিনি মনে করেন, রব্বানী ব্যক্তিত্বে ৫ ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি।
১. বিশ্বাসগত: আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস, আস্থা ও শর্তহীন আনুগত্য। দ্বীনি শিক্ষার প্রতি আনুগত্য ও প্রতিশ্রুতিশীল। ইবাদাতে একনিষ্ঠ বা খালেস।
২. ইসলামি নৈতিকতা: সবর, কোমলতা, সভ্য-ভব্য হওয়া, সৎ, আমানতদার, পিতা-মাতা, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ইত্যাদি।
৩. বৈজ্ঞানিক: বুদ্ধিবৃত্তিক, পর্যালোচনামূলক (critical), পড়ুয়া, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন, বিজ্ঞানের ব্যাপারে উদার, পদ্ধতিগতভাবে চিন্তাশীল।
৪. সামাজিক ও পরিবেশগত: দানশীল, সংস্কারমনা, বিবেচনা বোধসম্পন্ন, গণমুখী।
৫. নেতৃত্বগুণ: ন্যায়প্রেমী, প্রজ্ঞাসম্পন্ন, ব্যবস্থাপনা ও সংগঠক হিসেবে অনন্য, বাগ্মী ও দায়িত্বশীল। (সারবিনি, ২০১২)
রব্বানীদের দায়িত্ব:
১. আল্লাহ তায়ালার দেয়া শারীরিক-মানসিক নেয়ামতের শোকর আদায় করা ও সদ্ব্যবহার করা। (নাহল ৭৮)
২. আল্লাহর সৃষ্টিজগত, আসমান-যমিন, নিদর্শন নিয়ে তাফাক্কুর করা। (ইমরান ১৯১)
৩. পর্যালোচনামূলক হওয়া। অর্থাৎ যে কোন কথা শুনলেই তা অনুসরণ করে না। তারা প্রত্যেকের কথা শুনে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং যেটি ন্যায় ও সত্য কথা তা গ্রহণ করে। আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা কোন কথা শুনে তার ভুল অর্থ করার চেষ্টা করে না বরং তার ভাল অর্থ গ্রহণ করে। (যুমার ১৮)
৪. খলিফা ও আমানতের দায়িত্ব পালন করা। (বাকারা ৩০, আহযাব ৭২)
৫. সমাজের মানুষের কল্যাণার্থে জ্ঞানের আলোর প্রসার ও সামাজিক উন্নতির জন্য নানাবিধ দায়িত্ব পালন করা। (ইবরাহিম ১, রাদ ১৯-২২)
৬. আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য সার্বক্ষণিক ও সর্বাবস্থায় তাঁকে স্মরণ করা। (ইমরান ১৯১)
৭. অন্তর পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর স্মরণ ও নামায প্রতিষ্ঠা করা। (শামস ৯, আলা ১৪-১৫)
৮. আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করা। (রাদ ২৮)
৯. আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞান লাভ ও বিতরণ করা। (কাহাফ ৬৫)
১০. আল্লাহর আলোর (নূর) দিকে/থেকে পথনির্দেশ পাওয়া ও দেয়া। এই নূর কেবল জ্ঞান/হেদায়েত নয়, শাসনক্ষমতা বা কর্তৃত্ব, অন্তরের আলোকায়ন ও নন্দনের প্রতীক। (নুর ৩৫)
শেষ কথা: একজন রব্বানী দুনিয়ায় রবের প্রতিনিধি। তাঁর বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী বুঝতে হলে রব শব্দের বহুবিধ, বহুমাত্রিক, গতিশীল অর্থের দিকে খেয়াল করতে হবে। রবুবিয়াতকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। রব্বানীর সংজ্ঞা নির্ধারণে সালাফরা সেই কাজটি করেছেন। এককথায়, একজন রব্বানী যুগের চাহিদার আলোকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ইসলামের চর্চা করবেন, সমন্বয়বাদী ও সংস্কারক হবেন, উম্মাহ'র প্রতি দরদী হবেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন হবেন।
No comments