রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা: চিন্তা ও সংক্ষিপ্ত রূপরেখা || বাপ্পা আজিজুল || মানসলোক ||

 

রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা: চিন্তা ও সংক্ষিপ্ত রূপরেখা 

বাপ্পা আজিজুল


ভূমিকা 

রব্বানী শব্দটি রব্বা ধাতু থেকে আগত এককথায় যার অর্থ তাফসিরবিদরা করেছেন 'আল্লাহওয়ালা' বা আল্লাহর সাধক, রবওয়ালা বা মহান রবের লোক। রব শব্দের ৫ ধরণের অর্থ হয়: ১. পরিচর্যাকারী (nourisher), লালন-পালনকারী (sustainer), প্রয়োজনীয় বস্তু যোগানদাতা, তরবিয়ত ও ক্রমবিকাশ দাতা। ২. প্রভু (master), মালিক, মুনিব ও সত্ত্বাধিকারী (owner) অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ৩. জিম্মাদার, তত্ত্বাবধায়ক, দেখাশোনা ও অবস্থার সংশোধন-পরিবর্তনের দায়িত্বশীল। ৪. যিনি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করনে এবং যাকে কেন্দ্র করে লোকেরা সমবেত হয়। ৫. নেতা-সর্দার, যার আনুগত্য করা হয়, ক্ষমতাশালী কর্তাব্যক্তি, যার নির্দেশ চলে, যার কর্তৃত্ব মেনে নেয়া হয়, হস্তক্ষেপ ও বলপ্রয়োগের অধিকার আছে যার। 

ইমাম কুরতুবির মতে, রব্বানী সেই ব্যক্তি যিনি মানুষকে পথনির্দেশ (রাব্বা) করেন অল্প জ্ঞান থেকে বৃহৎ জ্ঞানের পরিসরের দিকে। ব্যাপারটি এমন যে, তিনি বিষয়গুলোকে সহজ করতে তার রবের অনুসরণ করছেন বা প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন। একজন রব্বানী রবের দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং তিনি সেই অনুযায়ী কর্ম সম্পাদনকারী। যদি তিনি জ্ঞানের অনুপাতে কাজ না করেন তাহলে তিনি জ্ঞানী (আলিম) বা রব্বানী নন।


ইবনে তাবারীর মতে, রব্বানী অর্থ হল যিনি মানুষের প্রতিপালন, কার্যনির্বাহ, প্রভূত্ব ও নেতৃত্ব দান করেন। ফিকাহ ও হিকমত শাস্ত্রের যিনি সত্যপন্থী আলিম, মানুষের কার্যাবলীতে কল্যাণের শিক্ষা দান করেন এবং তাদেরকে মঙ্গলের দিকে আহ্বান জানিয়ে প্রতিপালন করেন। এমনিভাবে আল্লাহভীরু হাকিম ও ওলি, যিনি মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করেন এবং দীন-দুনিয়ার কল্যাণার্থে মানুষের যাবতীয় কাজ-কর্মে নেতৃত্ব দান করেন, তারা সকলেই মহান আল্লাহর বাণী অনুযায়ী রব্বানী হওয়ার উপযুক্ত। যারা দীন-দুনিয়ার কাজকর্মে, ফিকাহ শাস্ত্র ও অন্যান্য জ্ঞানের শাখায় মানুষের জন্য খুঁটি স্বরূপ তারাও রব্বানী।

পূর্বসূরিদের মতামত পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়, একজন রব্বানী গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী হবেন। জ্ঞানের তিনটি উৎসের (আকল, নাকল, কাশফ) সমন্বয় সাধন করবেন। এক্ষেত্রে তিনি মধ্যমপন্থী ও সমন্বয়বাদী হবেন। তাঁর এই জ্ঞানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব থাকবে। তিনি জ্ঞান ও চিন্তার পরিশুদ্ধকরণে অগ্রবর্তী হবেন। সৎকর্মশীল ও সত্যপন্থী হবেন। তিনি জ্ঞান অর্জন করেই ক্ষান্ত হবেন না। জ্ঞানের বিকাশ ও প্রসারে সমকালীন সকল উপায়-উপকরণ কাজে লাগিয়ে প্রচেষ্টা চালাবেন। তিনি মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ে প্রতিপালন ও পথনির্দেশের দায়িত্ব পালন করবেন। সুখ-দুখের ভাগীদার হবেন। সমাজের বৃহত্তর কল্যাণার্থে কাজ করবেন। সেক্ষেত্রে সমাজের বিচ্যুতি ও বিকৃতি নির্ণয় এবং চিকিৎসার গুরুভার বহন করবেন। তিনি রাজনীতি সচেতন হবেন, রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবেন অথবা সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন। মূলত, তিনটি ক্ষেত্র বা ডোমেইনে তাঁর কাজের প্রধান ফোকাস ও এক্সপার্টাইজ থাকবে। ১. ধর্মতাত্ত্বিক ও জ্ঞানমূলক (Theo-epistemiological)  ২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক (Socio-cultural) ৩. বিচারিক ও রাজনৈতিক (Politico-legal)। একজন রব্বানী আল্লাহর হক আদায় ও বান্দার হক পরিপালন করে দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়গুলো তাঁর নজরে থাকবে, তবে তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অগ্রসর হবেন। 


রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা কী?

রব্বানী প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে রব্বানীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষানীতি ও কার্যক্রমকে রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা বলে। আল্লাহর রবুবিয়াত দর্শনের আলোকে পরিচালিত রব্বানী রাষ্ট্রব্যবস্থায় রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা হবে আদর্শ রব্বানী নাগরিক বা মহান রবের খলিফা (প্রতিনিধি তৈরির মূল উপকরণ। রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থারই সমার্থক একটি রূপ। ইসলামের স্বর্ণযুগে মরোক্কো থেকে দামেস্ক, বাগদাদ থেকে আন্দালুস পর্যন্ত বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্রগুলো রব্বানী শিক্ষারই বাস্তব নমুনা ছিল। পরবর্তীকালে কলোনি আমাদের এসব মারকাজকে ধ্বংস করেছে তো বটেই ইতিহাস, অবদানকেও খাটো করেছে। তাই উপনিবেশ আমলের বিইসলামিকরণকে আমাদের পুনরায় ইসলামিকরণ (Re-islamization) করতে হবে। রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আমরা তাই জ্ঞান ও শিক্ষার ইসলামিকরণকেই জোর দিতে চাই যার পাটাতনের উপর সুসজ্জিত মিনার হিসেবে প্রকৃত রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা শোভিত হবে। 


রব্বানী শিক্ষার অর্থ ও উদ্দেশ্য:

বাংলা শব্দ 'শিক্ষা' বা ইংরেজি 'এডুকেশন' শব্দটির তিনটি আরবি পাওয়া যায়। যথা- ১. তারবিয়াহ ২. তা'লিম ৩. তা'দিব। এই তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানলে আমরা ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষার অর্থ, গুরুত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারবো। 


১. তারবিয়াহ

তারবিয়াহ শব্দটির মূল ধাতু 'রব্বা'। যা 'রব' বা আমাদের পালনকর্তার সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ শিক্ষা বিষয়টি আমাদের রবের সঙ্গে যুক্ত এবং তার কাছ থেকেই আগত যা সুরা আলাকে বর্ণিত আছে। সুতরাং যে শিক্ষা মানুষকে তার রবের বিমুখ করে দেয় সেটি আদতে কোন শিক্ষা হতে পারে না। রব্বা ধাতুর তিনটি রূপ। ১. রাবা-ইয়ারবু, মানে growing বা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া। ক্রমাগত জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। ২. রাব্বিয়া-ইয়ারবায়া, মানে being big বা সাইজে বড় হওয়া। জ্ঞানের ভলিউম বাড়বে। ৩. রাব্বা-ইয়ারুব্বু, মানে improving বা উন্নতি করা, controlling বা নিয়ন্ত্রণ করা, guiding বা পথ নির্দেশ করা, maintaining বা চর্চা বা লালন করা। অর্থাৎ শিক্ষার সিলেবাস বা কারিকুলাম, মূল্যায়ন পদ্ধতি এমন হবে যেন উপর্যুক্ত সবগুলো দিক ও উদ্দেশ্য কাভার করে। অর্থাৎ শিক্ষার উদ্দেশ্য শিশুদের সঠিক পরিচর্যা ও লালন-পালন নিশ্চিত করা। রবের সাথে শিক্ষার সংশ্লিষ্টতার কারণে এখানে রুহের পরিচর্যা হবে। 


২. তা'লিম 

তা'লিম শব্দটি আলামাহ শব্দ থেকে আসছে যেটি কোরআনে আছে। অর্থ to know, to learn। এখানে শিখতে হবে, শেখাতে হবে। শিক্ষককে আপডেটেড থাকতে হবে। এখানে নাকলের জ্ঞান বাড়বে। কুর'আনে সুরা আর-রহমানে আছে, 'আর-রহমান। আল্লামাল কুর'আন'।আল্লামা শব্দের ব্যাখ্যা থেকে আরও জানা যায়- যিনি শিক্ষক তিনি রহম নিয়ে, সময় নিয়ে, অল্প অল্প করে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা দেন। 


৩. তা'দিব

তা'দিব এর মূল শব্দ আদাব অর্থ শিষ্টাচার। এর ৩টি রূপ আছে। ১. আদুবা-ইয়াদুবু, অর্থ training, disciplining yourself for good behavior and manners। ২. আবা আদাবা-ইয়াদিবু, অর্থ doing and behaving politely। ৩. আদ্দাবা, মানে educating, training, improving, disciplining, and giving action। অর্থাৎ শিক্ষার একটা রিফ্লেকশন জীবনে, আচরণে থাকতে হবে। এখানে আকলের উন্নয়ন হবে। জ্ঞানের অহংকার থাকবে না। ফলভারে বৃক্ষ অবনত হবে। শিক্ষা শুধু তত্ত্বীয় হবে না, ব্যাবহারিক ও এপ্লায়েড অংশ থাকবে। কর্মে বাস্তবায়ন করতে হবে। 


সুতরাং ইসলামাইজেশন অব নলেজ এন্ড এডুকেশনে এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কেবল কিছু কুর'আন-হাদিস বা আরবি সিলেবাসে যোগ করলে হবে না।

 

শিক্ষার ইসলামিকরণে বৈশ্বিক ভূমিকা: 

বিশ্বব্যাপী জ্ঞান ও শিক্ষার ইসলামিকরণে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন ড. সৈয়দ আলী আশরাফ, ড. ইসমাইল রাজী, সৈয়দ হুসেন নাসের, সাইয়েদ মুহাম্মদ নকিব আল আত্তাস। ড. সৈয়দ আলী আশরাফের উদ্যোগে ১৯৭৭ সালে মক্কায় ১ম 'বিশ্ব মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন' অনুষ্ঠিত হয় এবং ফলো আপ হিসেবে পরবর্তীতে আরও ৫ টি (মোট ৬টি) বিশ্ব মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (১৯৯৬ পর্যন্ত)। জ্ঞান একটি এবস্ট্র‍্যাক্ট বিষয়  সেটির সেক্যুলারাইজেশন বা ইসলাইমাইজেশন করা যায় না। তবে জ্ঞান আরোহণের মাধ্যম ও পদ্ধতি (অর্থাৎ শিক্ষা) ইসলাইমাইজেশন করা জরুরি। কেননা কলোনি ও মডার্নিজম শিক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বি-ইসলামিকরণ করেছে, সুতরাং ইসলামিকরণের মাধ্যমেই আমাদের উত্তর আধুনিক ও উত্তর ঔপনিবেশিক যাত্রা শুরু এবং সফল হতে পারে। ড. আশরাফ মনে করেন, সর্বপ্রকার জ্ঞান বা শিক্ষার মাধ্যমে স্কুল, কলেজ,  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আমরা যা বিতরণ করি তার ভিত্তিমূলে মানব প্রকৃতি সম্বন্ধে এবং জ্ঞান আহরণ সম্পর্কে ইসলামী ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠিত করাই সত্যিকার শিক্ষার ইসলামীকরণ করা। ড. ইসমাঈল আর-রাজী মনে করেন, পাশ্চাত্য শিক্ষার সবকিছু অবক্ষয়ী নয়। জ্ঞানের ইসলামিকরণে পশ্চিমা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে ইসলামী জ্ঞান, দর্শন ও মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে। তিনি এলক্ষ্যে International Institute of Islamic thought (IIIT) গঠন করেন। যার বাংলাদেশ চ্যাপ্টার BIIT নামে পরিচিত। আল-আত্তাস শিক্ষার সমার্থক হিসেবে আরবি তা'দিব ও আদব শব্দের ওপর জোর দেন। তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞানের সাথে সমন্বয় নয়, বরং ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থাকে তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও দর্শনে প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী। এলক্ষ্যে তিনি কুয়ালালামপুরে International Institute of Islamic Thought and Civilization (ISTAC) প্রতিষ্ঠিত করেন। 


শিক্ষার ইসলামিকরণ ও বাংলাদেশ:

উপনিবেশিক ভারতে শিক্ষার ইসলামিকরণ নিয়ে ১ম তাত্ত্বিক আলোচনা সামনে আনেন মওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী। তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানে ইসলামী শিক্ষানীতি প্রণয়নে সরব হয়। ইসলামি শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্ট  ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক নেতা আব্দুল মালেক শহিদ হয়। ইসলামী ছাত্রশিবির দিনটিকে 'ইসলামী শিক্ষা দিবস' হিসেবে পালন করে। তবে দীর্ঘ সময়ে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক কতিপয় জাতীয় সেমিনার আয়োজন ও স্মারক সংকলন ব্যতীত ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে দলটির কোন রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। এসংক্রান্ত তাদের প্রণীত পুস্তকও খুব নগণ্য এবং প্রাথমিক পর্যায়ের। ১৯৭৪ সালে মওলানা ভাসানী টাংগাইলের সন্তোষে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও তৎকালীন সরকারের অনুমতি মেলেনি। উল্লেখ্য, সৈয়দ আলী আশরাফের উদ্যোগে ১৯৮১ সালে ঢাকায় ২য় বিশ্ব মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন' সম্পন্ন হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মক্কা ঘোষণার আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি থেকেই 'কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠার কাজ বেগবান হয়। শিক্ষার ইসলামিকরণের উদ্দেশ্যে নিজস্ব চিন্তা ও অভিজ্ঞতার আলোকে ড. আশরাফ গড়ে তুলেন স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান 'দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি'। এছাড়া তিনি ১৯৮০ সালে OIC প্রতিষ্ঠিত 'বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র' জেদ্দার মহাপরিচালক হন। ক্যামব্রিজের 'ইসলামিক একাডেমি'র প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালকও ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুর আগ পর্যস্ত তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে 'মুসলিম শিক্ষা কমিটি' নামে একটি কমিটি গঠন করেন। শুরুতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কবি সৈয়দ আলী আহসান। পরে এতে আরও দুজনকে কো-অপ্ট করা হয়। সেই দুজন ছিলেন তাঁরই সহোদর ড. সৈয়দ আলী আশরাফ ও ড. সৈয়দ আলী নকী (প্রাক্তন পরিচালক, ইসলামিক একাডেমি)। কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে কিছু সুপারিশ করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো মক্কা ঘোষণার আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামিকরণ করা এবং সেক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত 'নিউ স্কিম কারিকুলাম'কে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে পুনরায় প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা। বলা বাহুল্য, বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার শোচনীয় অবস্থায় বারবার কেবল তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন। সৈয়দ আলী আশরাফের জীবদ্দশায় Syed Ali Ashraf Center for Islamization of Knowledge and Education (SAACIKE) গঠন করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর গুণমুগ্ধ কবি ও উত্তর আধুনিক চিন্তক ইশারফ হোসেন SAACIKE কে এগিয়ে নেন। বিগত জোট আমলে শিক্ষার ইসলামিকরণে বেশ কিছু তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও তার ধারাবাহিতা রক্ষা হয়নি। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে National Committee for Islamization of Knowledge and Education Bangladesh (NCIKEB) গঠিত হয়। এর চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। ইশারফ হোসেন সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় SAACIKE ও NCIKEB এর উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন চেইন প্রোগ্রাম (সেমিনার, সিম্পোজিয়া, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি) করা হয়, কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা হয়। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও জোট সরকারের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করে শিক্ষার ইসলামিকরণ প্রক্রিয়া অগ্রসর হলেও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জেঁকে বসা ইসলামফোব ফ্যাসিবাদের কারণে শিক্ষার ইসলামিকরণ প্রচেষ্টা অংকুরে বিনষ্ট হয়। বাংলাদেশ বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ৪-৫টি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ ইসলামিকরণ করা সম্ভব হয়নি। কওমি ঘরানার অন্যতম আকাবির সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভীও একাবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নয়া শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেন, "এমন বিশেষজ্ঞদের নির্বাচন করতে হবে, যারা প্রতিটি বিষয়ে পাণ্ডিত্য রাখেন। তারা এমন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করবেন, যাতে একদিকে থাকবে কোরআন ও সুন্নাহর অপরিহার্য ও দ্বীনের অপরিবর্তনীয়  বিষয়াদি, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় আধুনিক বিদ্যাসমূহ। তারা মুসলমানদের নতুন প্রজন্মের জন্য আধুনিক বিদ্যাসমূহ নতুনভাবে বিন্যস্ত করবেন যারা ইসলামের মূলনীতি ও মৌলিক চেতনার ভিত্তিতে হবে। তাতে এমন প্রতিটি বিষয় থাকবে, যা নতুন প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় যা দ্বারা তারা তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারবে, জীবনকে সাজাতে পারবে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ও নিজেদের সম্পদ কাজে লাগাতে পাশ্চাত্যের মুখাপেক্ষী হবে না"। বলা বাহুল্য, সাইয়েদ নদভীর নয়া শিক্ষা ভাবনা রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থার মূল চেতনারই প্রতিধ্বনি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দেওবন্দ কিংবা বাংলাদেশের কওমি অঙ্গনের মুরুব্বিরা তাদের আকাবিরের চিন্তা ধারণ করে শিক্ষা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। 


রব্বানী শিক্ষা দর্শন: 

রব্বানী শিক্ষাদর্শনে আমরা ড. সৈয়দ আলী আশরাফের শিক্ষা দর্শনের মূল কথাগুলোই তুলে ধরতে চাই। মোটাদাগে পাঁচটি-

১. আল্লাহর সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক 

২. সৃষ্টির সাথে আল্লাহ সম্পর্ক 

৩. মানুষের সাথে অন্যান্য সৃষ্টির সম্পর্ক 

৪. প্রকৃতির সাথে আল্লাহর সম্পর্ক 

৫. প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক 


তবে সৃষ্টি জগতের সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষ। আল-কুরআনের মূল বিষয়বস্তুও মানুষ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে জ্ঞানের বিভাজন হয় তিন প্রকার:

১. ধর্মবিজ্ঞান; আল্লাহর সাথে মানবজাতির সম্পর্ক সংক্রান্ত 

২. মানবিক বিজ্ঞান; মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বিষয়ক 

৩. প্রকৃতি বিজ্ঞান; প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক সংক্রান্ত 

   


বাংলাদেশে জ্ঞানের ইসলামিকরণের সমস্যা ও সম্ভাবনা

সমস্যাঃ 

১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষণের অভাব

২. দেশের শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উপনিবেশিক ও  আধুনিকতাবাদী হীনম্মন্যতা।

৩. জনগণের মধ্যে ইসলামি শিক্ষার প্রেক্ষিত ও রূপরেখার স্বচ্ছ ধারণার অভাব, ফলে গ্রহণে ভীতি কাজ করে। 

৪. দাতাগোষ্ঠীর চাপ

৫. দক্ষ শিক্ষক, জনবলের অভাব

৬. বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তার অভাব

৭. রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব

৮. ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক ভীতি


সম্ভাবনা: 

১. দেশের জনগণ সাধারণভাবে ইসলাম বিদ্বেষী নয়।

২. দেশের প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামি শিক্ষার সাথে সিকিভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এদেরকে সহজেই ইসলামি শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব। যা রেডিমেড ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। 

৩. তরুণ চিন্তক, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উত্তর ঔপনিবেশ ও উত্তর আধুনিক চিন্তাধারার অংশ হিসেবে ইসলামাইজেশন এর ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে।

৪. দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের অবসানে রাষ্ট্র, ছাত্রসমাজ ও জনগণ সবাই রাষ্ট্র মেরামতে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে।

৫. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অতীত ইতিহাসের সাথে ইসলামাইজেশনের প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে যা ভবিষ্যতের যেকোন ইনিশিয়েটিভের জন্য অনুপ্রেরণা, রেফারেন্স ও পাটাতন হিসেবে কাজ করবে। 


বাংলাদেশে রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষার ইসলামিকরণে করণীয়:


১. রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারদের একমত হতে হবে।

২. রব্বানী শিক্ষা কমিশন গঠন

৩. রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থার রুপরেখা প্রণয়ন

৪. কারিকুলাম, সিলেবাস, পুস্তক প্রণয়ন

৫. বাজেট, অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট দান

৬. শিক্ষক এবং জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ 

৭. সামাজিক সচেতনতা তৈরি

৮. পূর্ণাঙ্গ ইসলামিকরণে ১৫-২০ বছরের দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ

৯. পাইলট প্রকল্প চালু করা

১০. নিরপেক্ষ গবেষক দিয়ে আউটকাম নিয়ে গবেষণা করানো ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করা।

১১. রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্র‍্যাজুয়েশন পর্যায়ে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ হবে সারা দুনিয়ার মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও আস্থার স্থান। 

১২. মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থার অভিজ্ঞতা ও রিসোর্সকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

১৩. বাংলাদেশে রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে কৌশলগতভাবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উতরানো এবং মোকাবেলা করা।

১৪. সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া।


রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থার সাধারণ বৈশিষ্ট্য: 

১. সমগ্র দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু হবে।

২. শিক্ষায় ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিক প্রাধান্য পাবে।

৩. বাস্তবমুখী, হালনাগাদ ও কর্মমুখী শিক্ষা 

৪. সহ শিক্ষার বিলোপ

৫. শিক্ষাক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বৈষম্য দূরীকরণ

৬. সর্বস্তরে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ

৭. শিক্ষার প্রতি বিশেষ বাজেট বরাদ্দকরণ

৮. রব্বানী প্রজন্ম ও নেতৃত্ব তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করা।

৯. প্রতিটি বিষয়েই জ্ঞানের ইসলামিকরণ করা হবে। অর্থাৎ রব্বানী দৃষ্টিকোণ বা ইসলামি পয়েন্ট অব ভিউ থেকে মানবিক বিজ্ঞান, ভৌত ও পরিবেশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা শাস্ত্র, ব্যাবসায় বিজ্ঞান, আইন শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে নতুন করে পুস্তক প্রণয়ন করা হবে। 



প্রস্তাবিত কারিকুলাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি: 

এটি কারিকুলামের সংক্ষিপ্ত খসড়া। 


প্রি-স্কুল মক্তব (মসজিদভিত্তিক) 

প্রবেশের বয়স ৪ বছর। কোর্স ২ বছর। শ্লোগান: মজা করে পড়ি-লিখি। 

বর্ষ-১: বর্ণ পরিচয় ও শব্দগঠন

বর্ষ-২: বাক্য গঠন 

বিষয়: বাংলা, ইংরেজি, আরবি, গণিত

মূল্যায়ন: ২ বছর শেষে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। 


১ম-৫ম শ্রেণি: প্রাথমিক (ভর্তির ন্যুনতম বয়স ৬ বছর)

১. ধর্মবিজ্ঞান ১০০

- কুর'আন হিফজ 

- হাদিস (গুরুত্বপূর্ণ ৫০ টি হাদিস, সনদ ও ব্যাখ্যাসহ) 

- মাসায়েল, মুয়ামেলাত, আদব


২. ভাষা বিজ্ঞান ১০০

- বাংলা

- ইংরেজি

- আরবি 

৩. মানবিক বিজ্ঞান ১০০

- বাংলাদেশ স্টাডিজ (ইতিহাস, ভূপ্রকৃতি, জাতিসত্তা, অভ্যুদয় ইত্যাদি)

৪. ভৌত ও পরিবেশ বিজ্ঞান ১০০

- গণিত

- সাধারণ বিজ্ঞান

৫. কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস ১০০

- শরীরচর্চা

- অংকন


৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণি: মাধ্যমিক 

১. ধর্মবিজ্ঞান (২০০)

* ১ম পত্র

- কুর'আন

- হাদিস

* ২য় পত্র

- ফিকহ

- সিরাহ


২. ভাষাবিজ্ঞান (২০০)

১ম পত্র

- বাংলা

- ইংরেজি

- আরবি

২য় পত্র

- সাহিত্য (বাংলা, ইংরেজি, আরবি + অনুবাদ)


৩. মানবিক বিজ্ঞান (২০০)

১ম পত্র

- ইতিহাস

- রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি 

২য় পত্র

- দর্শন ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব 

- মনো-ব্যবহারিক বিজ্ঞান


৪. ভৌত ও পরিবেশ বিজ্ঞান (৩০০)

১ম পত্র

- গণিত

২য় পত্র

- পদার্থবিদ্যা

- রসায়ন বিজ্ঞান

৩য় পত্র

- জীব বিজ্ঞান

- কৃষি ও গার্হস্থ্য শিক্ষা 


৫. কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস (১০০)

১ম পত্র 

- শারীরিক ও পুষ্টি বিজ্ঞান

-  কমিউনিটি শিক্ষা (সামাজিক কার্যক্রম প্রজেক্ট)

২য় পত্র

- চারু ও কারু

- আইসিটি 


মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে মোট ৪ বছর। মূল্যায়ন পরীক্ষা বছরে ৩ বার। মূল্যায়ন লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক। ৯ম ক্লাসের পরে বোর্ড পরীক্ষা। 


১০ম-১১শ: উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল

দশম ক্লাসে এসে ছাত্ররা গ্রুপ হয়ে যাবে। যে যার ক্যারিয়ারের দিকে ঝুঁকবে। এটি হবে মূলত উচ্চশিক্ষার সাথে ব্রিজিং। যে স্কুলে ভর্তি হবে সেটি মেজর গ্রুপ হিসেবে গণ্য হবে। ২ বছরের মধ্যে ৩ মাস প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

১. স্কুল অব রিলিজিয়াস & লিগ্যাল সায়েন্স

২. স্কুল অব হেলথ & মেডিসিন

৩. স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি

৪. স্কুল অব বিজনেস & ব্যাংকিং 


সিলেবাস ও মূল্যায়ন: ১০০০ মার্কসের মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে। মেজর গ্রুপ বিষয়ে ৬০০ মার্কস। বাকি ৩ টি গ্রুপ থেকে ৩০০ মার্কস। প্যারামিলিটারি প্রশিক্ষণ ১০০ মার্কস। 


গ্র‍্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন

১০ম-১১শ ক্লাসে যে যে গ্রুপে পড়েছিল সেই রিলেটেড এপ্লায়েড বিষয়ে গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সুযোগ পাবে। অনার্স ৩ বছর, মাস্টার্স (থিসিস সহ) ১ বছর কোর্স হবে। যেকোন বিষয়ে অনার্সে অবশ্যই টিচিং ও রিসার্চ মেথডোলজি কোর্স যুক্ত থাকবে। মেডিকেল সায়েন্সের ব্যাচেলর ডিগ্রি ৪ বছর এবং পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা/এমফিল ২ বছর, লং কোর্স (যেমন- বর্তমান MD/MS, FCPS) ৩ বছরের হবে। 


শেষ কথা: 

একজন রব্বানী দুনিয়ায় রবের প্রতিনিধি। তাঁর বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলী বুঝতে হলে রব শব্দের বহুবিধ, বহুমাত্রিক, গতিশীল অর্থের দিকে খেয়াল করতে হবে। রবুবিয়াতকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। রব্বানীর সংজ্ঞা নির্ধারণে সালাফরা সেই কাজটি করেছেন। এককথায়, একজন রব্বানী যুগের চাহিদার আলোকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ইসলামের চর্চা করবেন, সমন্বয়বাদী ও সংস্কারক হবেন, উম্মাহ'র প্রতি দরদী হবেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন হবেন। তাই রব্বানী শিক্ষাব্যবস্থাকেও সেইভাবে প্রণয়ন করতে হবে। 




1 comment:

  1. মাশাল্লাহ চমৎকার লিখেছেন ভাইয়া। ইনশাআল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে এ ক্যারিকুলাম একদিন না একদিন চালু হবে।

    ReplyDelete

Theme images by A330Pilot. Powered by Blogger.